রান্নায় লাগে হাতের জাদু!



আমি বিষয়টি আমার পরিবারের মধ্যেও দেখেছি। এই যেমন আমার পরিবারে নানি রান্না করতেন, মা করতেন, মামি ও চাচিরাও রান্না করতেন, আমি নিজেও রান্না করি। নানির হাতের গুড়ের পায়েস ছিল অমৃত, আমরা কেউ নানির মতো রান্না করতে পারিনি। মনে হতো, নানি কোনো এক জাদুবলে এই রান্না করতেন
আমার নানি টমেটো দিয়ে ছোট মাছের একটা চচ্চড়ি রান্না করতেন—এটা খেলে যে কারোরই মনে হতে পারে না জানি কী দিয়েছেন। আসলে কোনো কিছুই না, পুরোটা তাঁর হাতের জাদুতে হয়ে যেত। নানির এই রান্না আমার মাও চেষ্টা করেছেন, আমিও করেছি—কিন্তু ধারেকাছেও যেতে পারিনি। শুটিংয়ের ব্যস্ততার কারণে আমি রান্না করি কম। কিন্তু যখন করি তখন বিশেষ পদের কিছু করার চেষ্টা করি। আমার স্বামী এস আই টুটুল ও সন্তানেরা আমার রান্না করা কয়লা মুরগি খুব পছন্দ করে। বাসায় কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান হলে এটা তাদের চাই-ই। আবার মাঝেমধ্যে কয়লা গরুর মাংসও রান্না করি।
আমার হাতের সরষে ইলিশও ওরা খুব পছন্দ করে। সবাই যেভাবে এই মাছটা রান্না করেন আমি কিন্তু সেভাবে করি না। খাওয়ার পর সবারই প্রশ্ন, এটা কীভাবে রান্না করলাম? এটা শুধু আমাদের ঘরের মানুষদের প্রশ্ন না, আমার শ্বশুরবাড়িরও সবার প্রশ্ন। আমার ভাশুর, দেবর ও ননদের সন্তানেরা আমাকে মা বলে ডাকে। আমার হাতের রান্না ওদের সবারই ভালো লাগে।
রান্না করতে পছন্দ করি এবং এ ব্যাপারে নতুন কিছু জানতে আমি রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেছি। ‘রাঁধুনি শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই’ নামের অনুষ্ঠানের প্রথম সিজনটা আমার করা হয়েছে। আমার কাছে পুরো ব্যাপারটি খুবই ভালো লেগেছে। বাংলাদেশের আঞ্চলিক খাবার সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি।




উপকরণ: পোলাওয়ের চাল ৭৫০ গ্রাম, আদা ও রসুনবাটা পরিমাণমতো, ঘি ১ থেকে দেড় টেবিল চামচ, সয়াবিন তেল অল্প পরিমাণ, পেঁয়াজবাটা পরিমাণমতো, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া এক চা-চামচ, রসুনবাটা পৌনে এক চা-চামচ, নারকেলবাটা দেড় চা-চামচ, চিংড়ি মাছ ৫০০ গ্রাম, কোরানো নারকেল দেড় কাপ, তেজপাতা এবং এলাচি পরিমাণমতো।
প্রণালি: শুরুতে পোলাওয়ের চাল ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। এবার সসপ্যানে চার থেকে সাড়ে চার কাপ পানি দিন। লবণ দিয়ে ফুটাতে হবে। ফুটন্ত অবস্থায় ঘি, তেজপাতা, এলাচ ছেড়ে দিন। দুই মিনিট জ্বাল দেওয়ার পর চাল ছেড়ে দিন। আঁচটা মাঝারি করে রাখতে হবে। এখন আরেক চুলায় কড়াইয়ে তেল দিয়ে মরিচ ও হলুদ গুঁড়া এবং রসুন ও পেঁয়াজবাটা দিয়ে নাড়ুন। অল্প একটু পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। এরপর কড়াইয়ে চিংড়ি মাছ ছেড়ে দিতে হবে। এরপর নারকেলবাটা দিয়ে দিন। চিংড়ি মাছ প্রায় হয়ে এলে চুলার আঁচ কমিয়ে দিতে হবে। এবার পোলাওয়ের চালের ঢাকনাটা খুলে তাতে চিংড়ির মিশ্রণটি ঢেলে দিন। এরপর পোলাও ও চিংড়ির মিশ্রণটিতে কোরানো নারকেল দিতে হবে। পরে তাওয়ার ওপর দমে দিন। হয়ে এলে যেভাবে পরিবেশন করতে চান, সেভাবে করতে পারবেন।






















   


       
























জেলো পুডিংয়ের কাস্টার্ড

উপকরণ: লাল জেলো আড়াই টেবিল চামচ, নারকেলের দুধ ১ কাপ, পাউডার দুধ ৩ টেবিল চামচ, ডিম ৪টি, চিনি ৪ টেবিল চামচ, বাদাম-কিশমিশ পরিমাণমতো, গ্রাস পেপার ৪-৫টা, ফ্রেশ ক্রিম ১ কৌটা ও কাস্টার্ড পাউডার ১ চা-চামচ।









উপকরণ: গরুর মাংস হাড় ছাড়া ৮০০ গ্রাম, টকদই ২ টেবিল চামচ, আদা ও রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ, জিরাবাটা ১ চা-চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, সরিষা তেল পরিমাণমতো, পেঁয়াজ কুচি পরিমাণমতো, মরিচের গুঁড়া ৩ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচবাটা আধা চা-চামচ (ইচ্ছেমতো), পেঁপের ছিলকা বাটা ১ টেবিল চামচ, ধনে গুড়া পরিমাণমতো ও হলুদ ১ চা-চামচ।
প্রণালি: শুরুতে গরুর মাংস ছেঁচে নিতে হবে। এরপর মসলা দিয়ে ম্যারিনেট করে রেখে দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা। পরিমাণমতো অল্প একটু সরিষার তেল দিয়ে পুরো মাখানো জিনিসটা ছেড়ে দিতে হবে। এরপর মাঝারি আঁচে চুলায় মাংসটাকে কষাতে হবে। যদি প্রয়োজন পড়ে পানিও দিতে হবে। বিশ মিনিট পর ক্যাপসিকাম, গোল করে কাটা পেঁয়াজ ও কাজুবাদাম দিতে হবে। ঝুরঝুরে হয়ে গেলে মাংসগুলো কড়াইয়ের চারপাশে সরিয়ে নিয়ে মাঝে তেলের মধ্যে আগুনে লাল হয়ে যাওয়া কয়লা ছেড়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে দিন। পরিবেশনের আগে কয়লা তুলে নিন।



উপকরণ: দেশি মুরগির মাংস আড়াই কেজি, ফ্রেশ ক্রিম ১টি, টকদই ৪ টেবিল চামচ, টমেটো পিউরি ৪ টেবিল চামচ, মেথি গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচের গুঁড়া ৩ চা-চামচ, চিনাবাদামবাটা ১ টেবিল চামচ, কাঠবাদামবাটা ১ টেবিল চামচ, পোস্তদানাবাটা ১ টেবিল চামচ, জয়ত্রী-জায়ফল পরিমাণমতো, আদাবাটা ২ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ, জিরা ১ চা–চামচ, এলাচি ও তেজপাতা পরিমাণমতো, ধনে পাতা কুচি পরিমাণমতো এবং মাখন ৩ টেবিল চামচ।
প্রণালি: শুরুতে মুরগির সঙ্গে সবকিছু দিয়ে ভালো করে মেখে এক ঘণ্টার মতো রেখে দিতে হবে। ম্যারিনেট করা মুরগি কড়াইয়ে দিন। তার আগে কড়াইয়ে মাখন রাখতে হবে। মাঝারি আঁচে আধা ঘণ্টা রাখুন। প্রয়োজন হলে পানি দিতে পারেন। এরপর ধনে পাতা ও কাজুবাদাম ছিটিয়ে দিতে হবে। মাখন ওপরে চলে এলে চুলা থেকে কড়াই নামিয়ে নিন। পরিবেশনের সময় টমেটো ও শসা কুচি ছিটিয়ে দিন।








উপকরণ: লাল জেলো আড়াই টেবিল চামচ, নারকেলের দুধ ১ কাপ, পাউডার দুধ ৩ টেবিল চামচ, ডিম ৪টি, চিনি ৪ টেবিল চামচ, বাদাম-কিশমিশ পরিমাণমতো, গ্রাস পেপার ৪-৫টা, ফ্রেশ ক্রিম ১ কৌটা ও কাস্টার্ড পাউডার ১ চা-চামচ।
প্রণালি: প্রথমে সিলভার বাটিতে পরিমাণমতো চিনি ছিটিয়ে দেন। গাঢ় বাদামি না হওয়া পর্যন্ত গরম করতে হবে। এরপর ডিম, দুধ ও চিনির মিশ্রণটি সিলভার বাটি নিয়ে ওভেনে ১০-১৫ মিনিট দিয়ে রাখুন। চাইলে প্রেশার কুকারেও করতে পারেন। চারটা সিটি দেওয়ার পর তৈরি হয়ে যাবে পুডিং। এরপর হালকা গরম পানিতে লাল অথবা সবুজ জেলোটাকে মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করতে হবে। এবার ৪-৫টি গ্রাস পেপার দেড় কাপ ফুটন্ত গরম পানিতে ছেড়ে দিন। জাল দিতে হবে। সঙ্গে দিন ১ টেবিল চামচ চিনি আর নারকেলের দুধ ১ কাপ। এরপর তুলে নিয়ে রেখে ঠান্ডা করুন। তৈরি হলো নারকেলের জেলো।
এরপর ১ কৌটা ফ্রেশ ক্রিম, সঙ্গে দেড় টেবিল চামচ গুঁড়া দুধ পানিতে গুলিয়ে ক্রিমারের সঙ্গে মিশিয়ে চুলায় দিন। এক টেবিল চামচ (অথবা ইচ্ছেমতো) চিনি দিন। এক চা-চামচ কাস্টার্ড পাউডার দিয়ে মিনিট দশেক মাঝারি আঁচে ৫ থেকে ৭ মিনিট জ্বাল দিলে ঘন হয়ে আসবে। এবার লেয়ার লেয়ার করে পুডিং এবং জেলো দিয়ে তার ওপর কাস্টার্ডের মিশ্রণটি ঢেলে দিতে হবে। পরিবেশনের সময় বাদাম দিন।


Comments

Popular posts from this blog

Plain Rice Pollaw | Bengali Pollaw Recipe

Beef Kacchi Biriany | Gorur kacchi | গরুর কাচ্চি বিরিয়ানি

Nargisi kofta / kabab